মজার গল্প-গরিবের লটারী

0
63
মজার গল্প-গরিবের লটারী
মজার গল্প-গরিবের লটারী

গরিবের লটারী মজার গল্প টিতে সবিতা নামের একজন মহিলা অন্যের বাড়িতে কাজ করতো। শিবা তার একমাত্র ছেলে। শিবা প্রতি বছর স্কুলে ভাল রেজাল্ট করতো। শিবা তার মায়ের সাথে একটি বাড়িতে যায় যে বাড়িতে শিবার মা সবিতা কাজ করতো। একদিন শিবা একটি বই হাতে নিয়ে পড়তেছিল।

আসসালামুয়ালাইকুম বন্ধুরা। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, মহান আল্লাহ তা-আলার রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে মজার গল্প শুনাবো। মজার গল্প টির নাম দিয়েছি গরিবের লটারী। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করি মজার গল্প গরিবের লটারী-

মজার গল্প গরিবের লটারী

মোহনপুর নামে একটা গ্রাম ছিল। সেই গ্রামে সবিতা নামে এক বিধবা নারী বাস করত। তার একটি মাত্র ছেলে ছিল যার নাম শিবা। শিবা খুবই নম্র-ভদ্র ছেলে ছিল এবং সে তার মাকে খুব ভালোবাসত। তারা খুব গরিব হওয়ার কারণে কোন উৎসব পালন করতে পারত না।

সবিতা অন্যের বাড়িতে কাজ করত। এভাবে একদিন তার ছেলে তাকে বলে মা তুমি সব সময় কাজ কর আমাকে সময় দাওনা কেনো! না বাবা তুমি ভুল ভাবছো, আমি যদি কাজ না করি তাহলে আমরা খাবার কোথায় পাব? হ্যা মা, তুমি ঠিক বলেছো, আমি বড় হয়ে চাকুরী করব। তখন আর তোমার কাজ করার প্রয়োজন হবে না।

ঠিক আছে বাবা তুমি আগে চাকুরী কর তারপর আমি কাজ করা বাদ দিব। এভাবে কথা বলে তার ছেলেকে জরিয়ে ধরে আদর করে। তারপর আবার সে তার কাজ করতে থাকে। শিবা তার মাকে সব সময় সাহায্য করে। ছাত্র হিসাবে সে খুব ভালো এবং স্কুলে প্রতিদিন যেত। এই ভালো পড়ার কারণে সে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করত।

প্রতি বছরে সে স্কুলে পুরুষ্কার পেত। আর সে স্কুলের পক্ষ থেকে উপবৃত্তি পায়। সেই উপবৃত্তির টাকা দিয়ে তার পড়াশুনা চলত। স্কুল শেষ করে সে তার মায়ের সাথে কাজ করতে যেত। শিবার পড়ার প্রতি এত মনোযোগ ছিল যে, যেখানে যেত পড়ার মত কিছু পেলে পড়া শুরু করে দিত।

যার ফলে তার সাধারণ জ্ঞান খুব ভালো ছিল। সে একদিন তার মায়ের সাথে পরাণ বাবুর বাড়িতে যায়। বাবু, তুমি এখানে বসো ততক্ষনে আমি আমার কাজ করে আসি। ঠিক আছে মা, তুমি যাও আমি এখানে আছি। তাহলে ঠিক আছে বাবা তুমি তাহলে থাক, আমি আসছি। এই কথা বলে তার মা কাজ করতে চলে যায়।

শিবা ছোফায় বসে থাকে এবং সে টেবিলের উপর একটা পেপার দেখতে পায়। শিবা সেটা দেখে পড়া শুরু করে দেয়। সেখানে পরাণ বাবুর মেয়ে শ্যামা আসে। সে শিবাকে বলে এই তুমি কে এখানে কি করছো। শিবা বলে এখানে আমি আমার মায়ের সাথে এসেছি।

মজার গল্প শিবার সাথে শ্যামার ঝগড়া

শ্যামা, ঠিক আছে কিন্তু আমার ঘরে এসে পেপারে হাত দিতে কে বলেছে? এটা আমার বুঝেছ। শিবা বলে, আরে এটা আমি শুধু মাত্র পড়ছি। আমি তো এটা নিচ্ছি না বা নষ্ট করছি না। শ্যামা বলে, তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার বাড়িতে এসে আমার সাথে ঝগড়া করছো। দাঁড়াও আমি বাবা কে ডাকছি। বাবা ও বাবা, তার মেয়ের ডাক শুনে পরাণ বাবু সেখানে চলে আসে।

পরাণ বাবু বলে, কি হয়েছে মা? তুমি আমাকে ডাকছো কেন? বাবা তুমি দেখনা আমার বাড়িতে এসে আমার পেপার পড়ছে। আর আমি জিজ্ঞেস করেছি বলে, আমাকে বলে আমি কিছু করিনি। পরাণ বাবু বলে, এই ছেলে তুমি এখানে কিভাবে এলে? তুমি কার সাথে এসেছ, বল?

শিবা বলে আমি আমার মায়ের সাথে এখানে এসেছি। এই সব কথা শুনে সবিতা সেখানে চলে আসে। সবিতা বলে কি হয়েছে সাহেব। সাহেব বলে, এই  ছেলেটি কে? আর আমার বাড়িতে কি করছে? সাহেব ও আমার ছেলে বাড়িতে একলা বলে আমি ওকে সাথে করে নিয়ে এসেছি। শিবা বলে, মা আমি শুধু এই পেপারটি পড়ছিলাম। আর আমি কিছুই করেনি মা। এই কথা বলে সে তার মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

সবিতা বলে, সাহেব আজকের পর থেকে আমার ছেলে এখানে এসে পেপার পড়বেনা। সাহেব বলে, এটা ওর জন্য ভালো হবে। এই কথা শুনে সবিতা তার ছেলেকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

কিছুদিন পর, শিবার স্কুলের রেজান্ট বের হয় এবং শিবা প্রথম স্থান লাভ করে এবং সে পুরস্কৃত হয়। আর সাহেবের মেয়ে দ্বিতীয় স্থান লাফ করে। সবিতা সেই দিনে তার ছেলেকে নিয়ে পরাণ সাহেবের বাড়িতে চলে যায় কজ করার জন্য।

বাবা শোন আজ কোন জিনিসে হাত লাগাবেনা আমি তারাতারি কাজ শেষ করে আসছি। ঠিক আছে মা আমি কোন জিনিসে হাত লাগাবো না। আমি কাজ শেষ করে আসছি তুমি এখানে থাকো তাহলে। এই কথা বলে সবিতা কাজ করার জন্য সেখান থেকে চলে যায়।

লটারীর টিকেট ক্রয়

শিবা চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকে। তার কিছুক্ষণ পর শ্যামার বাড়িতে তার কিছু বান্ধুবীরা আসে। সবাই হাসাহাসি করতে থাকে। শ্যামা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায় তার সকল বান্ধুবিদের নিয়ে একটা কেক কাটে। শ্যামা ও তার সকল বান্ধবীরা কেক খাওয়া শুরু করে।

এক কোনায় দাঁড়িয়ে শিবা সবকিছু দেখছিল। তখন তার মা কাজ শেষ করে সেখানে আসছিল। চল বাবা এখন আমরা বাড়ি যাই। অনেক দেরি হয়ে গেছে। শিবা বলে, আমারও কেক চাই মা। তার মা বলে, এই কেক আমাদের জন্য নয় বাবা তুমি চল।

মা ওরা তো একটা কেক পুরোটা খেল আমাকে একটুও দিলনা। কষ্ট পেওনা বাবা আমার কাছে যখন টাকা আসবে তখন আমি তোমার জন্য কেক কিনে নিয়ে এসে তোমাকে খাওয়াব। শিবা বলে, তুমি সত্যি বলছো মা? সবিতা বলে, হ্যা বাবা সত্যি। তাহলে এখন চল মা আমরা চলে যাই।

এই কথা বলে, তারা বাড়ির দিকে ফিরছিল। বাড়ি ফেরার পথে সবিতার সামনে একটা ছোট ছেলে সবিতার কাছে আসে। আন্টি আন্টি আপনি একটা লটারীর টিকেট নেন না। মাত্র এক টাকা আন্টি। শিবা বলে, মা নাও না একটা লটারী। ঠিক আছে দাও একটা। সবিতা সেই বাচ্চার কাছ থেকে এক টাকা দিয়ে একটা লটারী ক্রয় করে।

শিবা আর সবিতা বাড়ি চলে যায়। বাড়িতে গিয়ে লটারী টি ঠাকুরের সামনে রেখে দেয়। আর সে তার ঘরের কাজ শুরু করে দেয়। শিবা তার ঠাকুরের কাছে গিয়ে প্রার্থণা করে, হে ঠাকুর তুমি সব সময় সবার কথা শোন আজ আমার কথা শোন আমার এই লটারীটা যেন মিলে যায়।

লটারী পেয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন

দ্বিতীয় দিন সবিতা তার ছেলেকে নিয়ে পরাণ সাহেবের বাড়িতে কাজ করতে চলে যায়। সেদিনও শিবার নজরে পেপার পড়ে। সেদিনের কথা মনে পরে শিবার। সে কারণে শিবা ঘরের এক কোনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক তখন সাহেবের মেয়ে সেখানে চলে আসে।

এই শিবা তুমি এদিকে আস আর আমার খেলনা গুলো এক জায়গায় রেখে দাও। ঠিক আছে আমি আসছি। এই কথা বলে শ্যামা পেপার পড়তে শুরু করে। শ্যামার নজর একটা লটারীর টিকেটের উপর চলে যায়। আর বলে বাবা আমি বলেছিলান না একটা লটারী নাও কিন্তু এই দেখ ১১২২৩ এই নাম্বারে লটারী লেগে গেছে বাবা।

পরাণ সাহেব বলে, আচ্ছা বাবা কাল কিনে নেব। এখন ঠিক আছে? শ্যামা উত্তরে বলে, ঠিক আছে বাবা। এই কথা বলে শ্যামা পেপার পড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শিবা তার কেনা লটারীর টিকেট টা বের করে আর তার উপরে যে নাম্বারটি ছিল তা মিলিয়ে নেয়। আর শিবা তার মাকে ডাকতে শুরু করে। মা মা তুমি তারাতারি এখানে চলে আস। শিবার কথা শুনে সে তার ছেলের কাছে চলে আসে।

আর এসে দেখে শিবার হাত সেই লটারীর টিকেট টা। কি হয়েছে বাবা তুমি ডাকছো কেন? আরে মা দেখ আমাদের এই লটারীর টিকেট টা মিলেছে। এখন থেকে তোমার আর কোন কাজ করার দরকার নেই। শিবা তুমি কি এটা সত্যি বলছো? হ্যা মা আজকের পর থেকে আর আমাদেরকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হবে না। চল মা এখান থেকে। সাহেব আমি আসি, এই কথা বলে সবিতা ও তার ছেলে সেখান থেকে চলে যায়। শ্যামা ও তার বাবা তাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে।

লটারীর টাকা দিয়ে সবিতা একটি সুন্দর বাড়ি বানায়। আর সবিতা তার ছেলের আশা পূরণ করে। তার ছেলে কে পছন্দের কেক খাওয়ায়। তখন থেকে সবিতার আর কাজ করা লাগেনি। তারা সুখে শান্তিতে বাসবাস করতে থাকে।

বন্ধুরা, গরীবের লটারী মজার গল্প থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, গরিব কে কখনো অবহেলা করা ঠিক নয়। তাদের কে সম্মান করা উচিত।