বুদ্ধিমান চা ওয়ালার গল্প

0
63
বুদ্ধিমান চা ওয়ালা গল্প
বুদ্ধিমান চা ওয়ালা গল্প

বুদ্ধিমান চা ওয়ালার গল্প টির প্রধান চরিত্রের নাম হল হরিস। হরিস বুদ্ধিমান চা ওয়ালার গল্প টিতে চা এর দোকানদার ছিল। সে সুন্দর চা বানাতো। কিন্তু সে নরম মনের মানুষ হওয়ার কারনে বন্ধু বান্ধব ও অসহায় লোকজন বিনা টাকায় চা খেত। তার ব্যবসায় সে উন্নতি করার জন্য চমৎকার একটি উপায় বের করলো।

আসসালামুয়ালাইকুম বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি, মহান আল্লাহ তা-আলার রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে খুব মজার একটা মজার গল্প শুনাবো বুদ্ধিমান চাওয়ালা গল্প । চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করি এখন বুদ্ধিমান চা ওয়ালার গল্প টি।

বুদ্ধিমান চা ওয়ালার গল্প

নাকপুর গ্রামের হরিস নামের চাওয়ালার একটি ছোট চায়ের দোকান চালাতো। একেতো  চা খুব সস্তা হয়। যাতে করে  সকল লোকজন খেতে পারে। তাছাড়াও  তার অনেক বন্ধু বিনা পয়সায় চা খেতে  চলে  আসে  তার চায়ের দোকান এ। কখনো অসহায় মানুষ তার চায়ের দোকান এ চা খেতে  আসত। এরকম করে হরিসের লোকসান হয়ে যেত। এ ব্যাপারে সে খুব চিন্তিত থাকত। যাই হোক তারপর সে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে আসল।

তারপর সে তার  স্ত্রীকে ডাকল এবং বলল এই নাও সুবন (তার স্ত্রীর নাম সুবন)। আজকেও একই অবস্থা। প্রতিনিয়ত এত পরিশ্রম করার পরও আমি লাভ করতে পারিনা। আর যখন লাভ হয় তখনে বাকি খাওয়ার জন্য বন্ধুরা চলে আসে আমার চায়ের দোকান এ। আবার কখনো কখনো গরিব লোকেরা চলে আসে। একটা চা বিক্রি করে তো এক টাকা রোজগার হয়। তা আবার তো ঐ বন্ধুদের জন্য তাও হয় না।

হরিস স্ত্রী বললঃ গরিব, অসহায় লোকদের তো চা খাওয়ানো তো ভাগ্যের ব্যাপার।
হরিস বললঃ বাকি খাওয়ার বন্ধুদের?
স্ত্রী বললঃ ওরা তো ওদের ভাগ্যে খায়। এটা ভেবে তুমি না হয় খুশি হও। এসো বস অনেক হয়েছে এবার তুমি খেয়ে নাও তো।

পরের দিন সকালে চায়ের দোকান খোলার পর, অনেকে এসেছে চা খেতে । চা খেতে আলাপ করতেছে, তার মধ্যে একজন বলে উঠল আমার বউয়ের শরীরটা খুব খারাপ। আমার হাতে তো টাকা নেই কি করি বলতো। ডাক্টরের কাছে যাওয়ার মত কোন টাকা নেই। তার মধ্য তার এক বন্ধু বলল আমার বেতন পাইনি যদি পাইতাম তাহলে দিয়ে দিতাম।

তুমি হরিস ভাইকে বলে দেখ তো তার কাছে টাকা আছে কিনা। হরিস ভাই তুমি আমাকে ৫০০ টাকা দিতে পারবে। আগামী দুই দিন পর মাইনা পেলে তোমাকে টাকাটা দিয়ে দিতাম। আমার বউয়ের শরীরটা খুব খারাপ তো। আমি দু-দিন পর অবশ্যই দিয়ে দিব। হরিস বলল, ঠিক আছে এই নাও টাকা।

বুদ্ধিমান চা ওয়ালার কাছ থেকে টাকা ধার

দুই দিন পর ঐ লোকটি আবার দোকানে আসল আর তার সেই ৫০০ টাকা ফিরিয়ে দিল। সে টাকা নিয়ে যখনে তার বাক্সতে রাখতে যাচ্ছিল তখনি আর একজন চলে আসল। এবং বলল সাধন বলছিল, তুমি নাকি তাকে ৫০০ টাকা সাহায্য করেছিলে। আমাকেও একটু সাহায্য করবে, আমাকেও ৩০০ টাকা দিবে। আগামী কাল বিকাল বেলা তোমাকে ফিরিয়ে দেব। খুব অসুবিধায় আছি আমি? হরিস তাকেও ৩০০ টাকা দিয়ে দিল।

পরের দিন সত্যি বিকাল বেলা ঐ লোকটি চলে আসল হরিসের টাকা ফেরত দিতে। হরিস টাকা নিয়ে তার বাক্সে রেখে দিল এবং তাকে চা খেতে দিল। তার একটু পর একজন অসহায় লোক তার দোকানে আসে। এসে বলল আমাকে ভোলা পাঠিয়েছে, আমাকে ১০০০ টাকা দিয়ে উদ্ধার কর না ভাই। আমার খুব দরকার না হলে আমি মারা পরব, প্লিস ভাই আমাকে টাকা দাও। আগামী পরসু ঠিক দিয়ে দেব প্লিস ভাই দাওনা।

হরিস বলল, আমিতো ভোলাকে এমনি সাহায্য করেছিলাম। আসলে ভাই আমার কাছে এত টাকা থাকেনা। না হরিস দা এরকম বল না ভাই। তুমি টাকা না দিলে আমি খুব বিপদে পড়ব। আমি ঠিক আগামী পরসু তোমাকে টাকাটা দিয়ে দিব ভাই।

হরিস বলল, ঠিক আছে ভাই এই নাও ১০০০ টাকা। তার মনে মনে ভয়ও লাগত যে টাকার যে কি হয়। সে যদি টাকা না দিয়ে পালিয়ে যায়।  ১০০০ টাকা হরিসের কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল।

দু-দিন পর, ঐ লোকটা ঠিক সময়ে চলে আসে এবং হরিসকে ১০০ টাকার কিছু নোট দেয়। সে নোট গুনে দেখে ১২০০ টাকা আছে।  হরিস বলল, দাদা এখানে তো ১২০০ টাকা আছে। আপনি তো ১০০০ টাকা নিয়ে নিলেন আর আমাকে ১২০০  টাকা দিলেন। এই নেন আপনার ২০০ টাকা। লোকটি বলল, না না হরিস দা এটা আমার তরফ থেকে এটা তোমাকে দিলাম। তুমি আমার বিপদে সাহায্য করেছ, তাই তোমাকে এটা আমি দিলাম।

সাহায্যের নামে অতিরিক্ত আয়

হরিস বলল, না না ভাই এটা আমি নিতে পারব না। নিয়ে নাও হরিস দা, না না আমি নেব না। আমি নিতে পারব না। এই বেশি টাকাটা তুমি নাও, না হরিস দা তুমি নাও। প্রয়োজনে একমাত্র তুমি তো কাজে আস আর কেউ তো আসেনা। যদি দরকার লাগে আবার নিয়ে নেব। তুমি রাখ হরিস দা, ঠিক আছে আমি আপনার এই ২০০ টাকা আমার পকেটে রাখছি। যখন দরকার পরবে নিয়ে নেবে। এই  কথা বলে হরিস বাড়ি জিলাপি নিয়ে যায়।

হরিসের বউ জিলাপি দেখে খুশি হয়ে যায়। হরিসের বউ বলল, আমার পছন্দের জিলাপি আমি ৪ মাস ধরে অপেক্ষা করছিলাম। আজ আমরা মনে হয়, তোমার ব্যবসায় খুব লাভ হয়েছে। হরিস বলল, শুধু রোজগার নয় অতিরিক্ত ২০০ টাকা পেয়েছি। এই দেখ, হরিসের বউ বলল, ২০০ টাকা (অবাক হয়ে),সেটা কিভাবে।

হরিস হেসে বলল, আমার এক খরিকদারের ১০০০ টাকা প্রয়োজন ছিল। আমি তাকে দিয়ে দিলাম, ওর কাজও হল, ওর কাজ শেষে আমাকে ১০০০ টাকার সাথে অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিয়ে দিল। এতদিন পর হরিস চাওয়ালা তার বউকে এত খুশি দেখল।

হরিস এত খুশি হয়েছিল যে, রাতে ঘুমানোর পর তার ঘুম এল না। সে ভাবতে লাগল আচ্ছা, লোকেরা আমার দোকেনে কেন মানুষ  এত দুঃখের কথা বলে। যদি আমি লোকদের এরকম সাহায্য করি তাহলে লোকেরা যদি আমাকে অতিরিক্ত টাকাও দেয় তাহলে তো আমার রোজগার করার একটা পথ খুলে যাবে।

তার পরের দিন থেকে হরিস লোক জনদেরকে শুধু চা খাওয়াইত না, ওদের কথা খুব মন দিয়ে শুনত। কেউ কেউ হরিসের কাছ থেকে সাহায্য চাইত, আর না হয় হরিস নিজেই সাহায্য করার প্রস্তাব দিত। আস্তে আস্তে সাবাই জানতে পারল যে, হরিস মানুষকে দেয় তার বদলে কিছু অতিরিক্ত টাকা নেয়। পরে বেশি টাকা নেওয়া সুদে রুপ নিল, যে কিছু সুদ নেয়।

হরিস গ্রামের প্রধান

প্রথম প্রথম হরিস অতিরিক্ত টাকাটা নিজের পকেটে রাখত। তারপর দুপুর হতে হতে তার পকেট ভরে যেত। তাই হরিস টাকা রাখার জন্য একতা বাক্স কিনে নিলো। কয়েক দিন পর বাক্সও ছোট হয়ে গেল। ছোট চায়ের দোকান অনেক বড় হয়ে গেল। তার চায়ের ব্যাবসা পাশে রয়ে গেল। তার সুদের ব্যাবসাটা খুব ভালো চলতে লাগল। তার দোকালে চা খাওয়ার লোক কম সুদের টাকা নেওয়ার লোক বেশি আসতে লাগল।

হঠাৎ একদিন এক লোক আসল আর বলল, হরিস ভাই আমার এক লাখ টাকার দরকার ফেরত দিতে একটু দেরি হবে। হরিস বলল, ঠিক আছে দাদা যখন ইচ্ছা তখন দিয়ে দিবেন কোন সমস্যা নাই। আপনার মেয়ে মানে আমার মেয়ে খুব ভালোভাবে বিয়ে দাও, এই নাও ১লাখ টাকা।

হরিসের ভাবনা শুধু সাহায্য করা ছিল না, ওর স্বভাবও খুব ভাল ছিল। ও শুধু নিজের গ্রামে নয়, আশে পাশে চারটি গ্রামেও এমন মর্যাদা তৈরি করে নিলো কিছু দিন বাদে যখন গ্রামের প্রধানের নির্বাচন ঠিক হল, সবাই নির্বাচনের জন্য হরিসের নাম ঠিক করল।

হরিস বারন করা শর্তেও কেউ সে কথা মানল না, আর ঐসব লোক যার না জেনে শুনে সাহায্য করেছিল তারা তাকে ভোট দিয়ে গ্রামের প্রধান বানিয়ে নিল। নিজের স্বামীকে গ্রামের প্রধান দেখে হরিসের বউ খুব খুশি হল।

হরিসের বউ বলল, এই যে শোন তুমি সবার উপর কি জাদু করেছ গো, চাওয়ালা থেকে সরাসরি গ্রামের প্রধান। বুঝলাম না তো? কি বলব সখি আমি শুধু একটা কথা জানি মানুষ যে কাজ করুক না কে? সে জীবনে বড় হওয়ার সুযোগ একবার হলেও পায়।