আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের কাছে অন্য রকম একটি রুপকথার গল্প নিয়ে এসেছি। আর যে গল্পটি নিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি তার নাম দিয়েছি, পাদ মারা বউ। চলুন শুরু করা যাক পাদ মারা বউ গল্পটি
পাদ মারা বউ এর জীবন কাহিনী
এক গ্রামে এক মেয়ে ছিল তার নাম ছিল রিয়া। রিয়া দেখতে অনেক সুন্দর ছিল। কিন্তু সুন্দর হলে কি হবে ? রিয়ার একটা বাজে অভ্যাস ছিল। সে বাড়ির খবার খেতে একদমি পছন্দ করতো না। সে বিভিন্ন ভাজা পোড়া, ঝাল মুরি,ফাস্ট ফুড আর স্নাক্স ( জল খাবার ) খেতে পছন্দ করত। এজন্য কোন খাবার এ তার পরিপাক হত না। অ্যাসিডিটির কারনে রিয়া যেখানে সেখানে পাদ মারতো। রিয়া যাই খেত সেটা গ্যাস হয়ে যেত যার ফলে সে মানুষের ভিড়েও পাদ মারতো। রিয়া নিজে পাদ মেরে অন্যের নামে দোষ চাপিয়ে কোন রকমে রেহাই পেত। বেশ কিছু দিন এভাবে কেটে যায়।
একদিন রিয়া তার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে এক রেস্টুরেন্ট এ যায়। এটা ছিল রিয়ার প্রথম দেখা। দুজনে বসে গল্প করছিল রেস্টুরেন্ট এ আর খাওয়া দাওয়া করছিল। এমন সময় রিয়া একটি পাদ মারে। পাদের কি যে বাজে গন্ধ। তার বয়ফ্রেন্ড বলে বাপরে বাপ কি দুর্গন্ধ। কে জানি পাদ মেরেছে। খাবার খাওয়ার মুড টাই চলে গেলো। তুমি কোন গন্ধ পাচ্ছো না? রিয়া বলে কই নাতো আমি তো কোন গন্ধ পাচ্ছি না।
এই বলে তারা আবার গল্প করতে লাগলো আর খেতে লাগলো। গল্প করতে করতে রিয়া এবার খুব জোরে পাদ মারে। সবাই রিয়াকে দেখে হাসতে থাকে। রিয়া অনেক বড় একটা লজ্জার মাঝে পড়ে যায়। তার বয়ফ্রেন্ড বলে তার মানে এটা তোমার কাজ। তুমি এই পাদ মেরেছো। কি বাজে গন্ধ রে বাবা। সত্যি করে একটা কথা বলো তো একটু আগে তুমিই পাদ মেরে ছিলেনা? রিয়া তার বয়ফ্রেন্ডকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলার জন্য থামতে বলে। কিন্তু তার বয়ফ্রেন্ড তার কোন কথাই শুনলো। সে বললো আর কি শুনবো হ্যা, এত ক্ষণ যে তোমার পাদের গন্ধতে বসে আছি এটা কি কম হয়ে গেলো।
আমি আর একফোটাও দারাতে পারবো না। সব মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে। তুমি যে এত বাজে গন্ধের পাদ মার এটা জানলে আমি কখনোই তোমার সাথে দেখা আসতাম না। লোক সমাজে মান সম্মান সব শেষ করে দিলে। বয়ফ্রেন্ড চলে যেতে লাগলো। রিয়া বললো কি হলো কোথায় যাচ্ছো? সে বলে মরতে যাচ্ছি এখানে আর দুই মিনিট থাকলে আমি এমনিতেই মরে যাব। রিয়ার বয়ফ্রেন্ড তার কোন কথাই শুনলো না। সে ব্রেকাপ করে সেখান থেকে চলে গেল। রিয়া ভীষণ কষ্ট পেল। সে মন খারাপ করে বাসায় চলে গেল।
এমন ভাবে বেশ কয় মাস চলে যায়। এতে রিয়ার পড়াশুনাও শেষ হয়ে যায়। রিয়ার মা বাবা তার বিয়ে দেয়ার জন্য ছেলে দেখা শুরু করে। কয়দিন পর রনি নামের একজন ছেলের সাথে রিয়ার বিয়ের সমন্ধ আসে। রিয়া কে দেখতে আসার আগে তার মা তাদের বাড়ি খুব ভাল ভাবে সুগন্ধি দিয়ে স্পে করে সুগন্ধ দিয়ে ভরে দেয়। কারন রিয়া ভুল করেও যদি বর পক্ষের সামনে পাদ মারে তাতে যেন কোন গন্ধ তাদের নাকে না যায় এজন্য সুগন্ধ স্প্রে করে।
কিছুক্ষণ পর রনি ও তার পরিবার আসলো রিয়াকে দেখতে। খুব ভালোভাবে রিয়ার মা বাবা তাদের স্বাগত জানায় এবং বসতে দেয়। তারা সুগন্ধি পেয়ে তার প্রসংসা করে। ঘর সাজানো গুছানোর প্রসংসা করে। রিয়ার মা বলে এসব আমার মেয়ে করেছে। রিয়া অগোছালো ,ময়লা , দুর্গন্ধ একদমই পছন্দ করে না। বর পক্ষ রিয়ার প্রসংসা করে তাকে দেখার জন্য ডাকতে বললেন।
রিয়া তাদের সামনে আসে। রিয়াকে দেখে রনির পছন্দ হয়। সে মনে মনে রিয়াকে বউ হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। রনির মা বলে, বাহ আপনাদের মেয়ে তো খুব সুন্দর । মেয়ের যেমন রুপ তেমনি গুণ। আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে। দেরি না করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হোক। ঠিক তখনি রিয়া খুব জোরে দুর্গন্ধময় পাদ মারে। সুগন্ধির কারনে পাদের গন্ধ কেউ পেল না। কিন্তু বরের মা আওয়াজের কথা বললে রিয়ার মা চালাকি করে বলেন এটা আমাদের চেয়ার এর শব্দ। অনেক দিনের চেয়ার তো তাই মাঝে মধ্যে এরকম শব্দ করে। রনির মা বলে শব্দ টা আমার কাছে পাদের শব্দ মনে হলো। রিয়ার মা তাদের কোন কিছুই বুঝতে দিলনা। রিয়ার মা তাদের কোন কিছু না জানিয়ে, রিয়ার বিয়ে রনির সাথে ফাইনাল করে দেয়।
কিছু দিনের মধ্যে তাদের ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে যায়। রিয়া তার শশুর বাড়ি যায়। কিন্তু এ কি ওখানে গিয়েও রিয়া পাদ মারতে থাকে। তার এই বাজে দুর্গন্ধের জন্য বাড়িতে থাকা মুশকিল হয়ে গেলো। রিয়ার শাশুরি কিছুই বুঝতে পারছিল না, যে এত বাজে গন্ধ কিসের জন্য হচ্ছে। এরকম ভাবে বেশ কিছু দিন কেটে যায়।
একদিন তার শাশুরি রিয়াকে বলে কি ব্যাপার বলোতো বৌমা এত বাজে গন্ধ । এই গন্ধে পুরো বাড়ি ভরে গেছে। রিয়াও বলে হ্যা মা আমিও এই গন্ধটা কয়দিন ধরে পাচ্ছি। আমার মনে হয় কয়দিন আগে আরশোলা আর ইদুর মারার জন্য আমি বিষ দিয়েছিলাম। ঐ বিষ খেয়ে ইদুর মরেছে মনে হয়। তার শাশুরি বলে আজকাল ইদুরের জ্বালায় বাড়িতে টেকা যাবে না মনে হয়।কি দুর্গন্ধ রে বাবা।
রিয়া তার শাশুরিকে বাজার থেকে এয়ার ফ্রেসনার নিয়ে আসতে বলে। এয়ার ফ্রেসনার স্প্রে করলে এই দির্গন্ধ চলে যাবে। তাছাড়া তো বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। রিয়ার শাশুড়ি তার বুদ্ধির প্রশংসা করে বাজারে গিয়ে এয়ার ফ্রেসনার নিয়ে আসে। এয়ার ফ্রেসনার দিয়ে পুরো বাড়ি স্প্রে করে। যার ফলে কিছু সময়ের জন্য দুর্গন্ধ চলে যায়। কিন্তু কিছু সময়ের জন্য হলে কি হবে রিয়ার পাদ তো বন্ধ হয় না। যখন রিয়া পাদ মারে তখন দুর্গন্ধ বের হয়। তার শাশুরি গন্ধ পেলে এয়ার ফ্রেসনার দিয়ে স্প্রে করে দুর্গন্ধ দূর করার চেষ্টা করে। এভাবে কয়দিন কেটে যায়।
একদিন রিয়া রান্না করতেছিল। রিয়ার শাশুরি তাকে বলে কি ব্যাপার বৌমা আমি কালকে বাজার থেকে যে বিস্কুট টা এনেছিলাম তা খুজে পাচ্ছি না ? রিয়া বলে মা বিস্কুট টা আমি এখানেই ডেস্কে রেখেছি। তার শাশুরির কোমরে ব্যাথার জন্য রিয়াকে বলে বিস্কুট টা বের করে দিতে। যেই না রিয়া নিচু হয়েছে বিস্কুট বের করার জন্য ঠিক তখনি একটা পাদ বের হয়ে যায়। তার শাশুরির বুঝতে বাকি থাকে না যে, আগে যে গন্ধ তিনি পেয়েছেন তা মরা ইদুরের গন্ধ নয় ওটা রিয়ার পাদের গন্ধ ছিল। ছিঃ ছিঃ এসব তাহলে তোমার কাজ ,পুরো ঘরে গন্ধ ছড়িয়ে ইদুর মরার নামে দোষ দিচ্ছো।
কি গন্ধ রে বাবা। রিয়া লজ্জায় পড়ে গেল। সে লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না । সে আমতা আমতা করতে থাকে। শাশুরি ধমক দিয়ে বলে, চুপ একদম চুপ। আমার নসিব যে তোমাকে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছি। রিয়া বলে মা আমাকে মাফ করে দেন। এই বাজে অভ্যাসের কারনে আমার বিয়ে হয় নি মা। তাই আমার মা এই কথা টা গোপন করে রেখেছিল যাতে আমার বিয়েটা হয়ে যায়। আমাকে ক্ষমা করে দিন মা।
শাশুড়ি বলে তোমার বাবা মা তো বিয়ে দিয়ে বেচে গেছে কিন্তু আমাদের কি হবে? সব সময় শুধু পাদ আর পাদ। আমাদের তো গন্ধসহ্য করতে হচ্ছে। বাড়িতে টেকাই আমাদের মুসকিল হয়ে যাচ্ছে। লজ্জা সরম এর মাথা খেয়েছো। সবার সামনে যদি এ রকম করো তাহলে লোকে কি বলবে? মান সম্মান সব শেষ করেই ছারবে দেখছি। দ্বারাও রনিকে আসতে দাও আগে আমি ওকে সব বলবো। যে এত দিন মরা ইদুরের গন্ধ ছিল না। এটা ছিল তোমার বউয়ের পাদের গন্ধ। রিয়া মন খারাপ করে ওখান থেকে চলে যায়।
রনি যখন বাসায় ফেরে তখন তার মা রনিকে সব বলে দেয়। রনি তার মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। সে তার মাকে কোন কিছু না বলে সোজা তার পাদ মারা বউ রিয়ার কাছে চলে যায়। রনি রিয়াকে বলে, আমি এসব কি শুনছি। তোমার পাদ মারার ঘটনা আমাকে আগে বলো নি কেন? রিয়া রনির কাছে ক্ষমা চায়, সে আরো বলে আসলে আমি তোমাকে আমার পাদ মারার ব্যাপারটা আগে জানাই নি।
কেননা জানতে পারলে তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দাও যদি ডিভোর্স দিয়ে দাও। সে জন্য আমি ভয় পাচ্ছিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দাও রনি। রনি বলে, আরে এটা কোন কথা হলো তুমি আমার বউ। আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো এটা তুমি ভাবলে কি করে। দরকার হলে আমি তোমাকে সবচেয়ে বড় ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাবো তবুও তোমাকে ছেড়ে আমি থাকবো না। রনি পরের দিন রিয়াকে এক বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল।
সব কথা খুলে বলে ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার রিয়াকে কিছু ঔষধ লিখে দেয় ও ফাস্ট ফুড তেল মসলা জাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করে দেয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেয়ে কয়েক দিনের মধ্যে রিয়া তার পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পায়। সে তার শাশুরি এবং স্বামীর সাথে হাসি খুশি জীবনযাপন করা শুরু করে দেয়। আর এই ভাবে তার বাকি জীবন কেটে যায়।