আমার প্রিয় পাঠক বৃন্দরা আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের কে একটা চমৎকার গল্প বলবো। আশা করি গল্পটি সবার ভাল লাগবে। আজকে আমি আপনাদের কাছে যে গল্পটি নিয়ে এসেছি, সেই গল্পের আমি নাম দিয়েছি গোলাপি রাজকুমারি ও তার সোনালী পাখির গল্প।
গোলাপি রাজকুমারি ও তার সোনালী পাখির ঘুম পারানি সুর
বহুকাল আগে এক দেশে এক সুন্দরী রাজকুমারী বাস করতো। অসাধারন তার রুপ আর গোলাপ ছিল তার খুব প্রিয়। মাথায় তার লম্বা লাল চুল। গোলাপ ছিল তার সব থেকে প্রিয় ফুল। তাই রাজ্যের সবাই তাকে গোলাপি রাজকুমারী বলে ডাকতো। রাজ্যের ছোট বড় সবাই তাকে খুব ভালবাসত।
একদিন সকালে কিছু বাচ্চা গোলাপি রাজকুমারীর কাছে গোলাপ ফুল নিয়ে আসলো। বাচ্চারা কেউ সাদা, কেউ লাল আবার কেউ হলুদ গোলাপ ফুল নিয়ে আসলো। তারা গোলাপ রাজকুমারীকে বলল, কার ফুল সবচেয়ে ভাল আর কার ফুল আপনার কাছে প্রিয়। তখন গোলাপ রাজকুমারী বলল,পৃথিবীর সব গোলাপ ফুল আমার কাছে প্রিয়। আমার প্রিয় বাচ্চারা। তখন গোলাপ রাজকুমারী বাচ্চাদের আদর করে দিল। বাচ্চারা হাসতে হাসতে চলে গেল।
গোলাপি রাজকুমারী প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা তার বারান্দায় এসে হাতে তালি বাজিয়ে তার সোনালী পাখিকে ডাকতো, আমার কাছে এসো প্রিয় পাখি। আর তখন দূর থেকে একটি সোনালী পাখি উরে এসে তার হাতে বসতো। আর সাথে সাথে গোলাপি রাজকুমারীর চুল আগের থেকে চকচক করতো। তার লম্বা লাল চুল যেন আরো লাল হয়ে যায়। তখন গোলাপি রাজকুমারি ও তার সোনালী পাখির গল্প যেন শেষ হয় না। দুষ্ট সোনালী পাখিকে বলে আমার চুল খেতে কি তোমার খুব ভাল লাগে। আর তখনি সোনালি পাখিটা একটা সুন্দর সুর ধরে।
গোলাপি রাজকুমারী সোনালি পাখির সাথে সুরে সুর মিলিয়ে তার সাথে গান গেয়ে উঠে। সুন্দর গানের সুরে তখন রাজ্যের সবাই ঘুমিয়ে পরে। আর রাজ্যের সবার রাত কেটে যায় সুন্দর সপ্ন দেখতে দেখতে। আর এই ভাবে দিন মাস বছর কেটে যায়। রোজ প্রতিদিন গোলাপি রাজকুমারী ও সোনালি পাখি কে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের মানুষ কে ঘুম পারানি গান শুনায়। যাতে সবাই ঘুমিয়ে পরে আর সুন্দর সপ্ন দেখতে দেখতে সকাল হয়ে উঠে।
কিন্তু হঠাৎ একদিন এক বিরাট বিপদ ঘটলো। এক দুষ্ট ডাইনি গোলাপি রাজকুমারীর কথা জানতে পারলো। গোলাপি রাজকুমারীর গান শুনে দুষ্ট ডাইনি তার কান বন্ধ করে দিল। আর বলল, ঐ গোলাপী রাজকুমারীকে আমার মোটেও পছন্দ নয়। তাছাড়া গোলাপি রাজকুমারী ভাল এবং দয়ালু। ডাইনি ভাবল, গোলাপি রাজকুমারী কে অভিশাপ দিতে হবে। তা নাহলে ওর সাথে পারা যাবে না। আর তখনি ডাইনিটা সাথে সাথে অভিশাপ দিল। আর গোলাপি রাজকুমারীর চুল সাথে সাথে কালো হয়ে গেল।
আর তখন গোলাপি রাজকুমারী তার কালো চুল দেখে অবাক হয়ে গেল। আর আমার চুলের রং কালো হলো কিভাবে। কিন্তু গোলাপি রাজকুমারী ভাবলো, না আমার রাজ্যের প্রজাদের ঘুম পারানি গান শোনাতে হবে। তারা যেন সুন্দর সপ্ন দেখে ঘুম আসতে পারে। আমার সে ব্যবস্থা করতে হবে।আর সেই দিন সন্ধ্যা বেলাতেই গোলাপি রাজকুমারী বারান্দায় গিয়ে তার সোনালি পাখিকে ডাকলো। সোনালি পাখি আসলো কিন্তু চুল লালের বদলে আরো কালো হয়ে গেল। গোলাপি রাজকুমারীর মন ভীষন খারাপ হলো।
আর তখন পাখিটি তার ঠোটে সুর তুললো। গোলাপি রাজকুমারী পাখির সুরে গান ধরলো। তাদের গান শুনে আগের মত সবাই ঘুমিয়ে পরলো। কিন্তু সেদিন রাজ্যের সবাই সুন্দর স্বপ্ন না দেখে খারাপ স্বপ্ন দেখলো। আর পরের দিন সকালে রাজ্যের সবাই বলতে লাগলো। কেউ বলছে চারদিকে শুধু অন্ধকার, কেউ বলছে আমি নদীতে ডুবে যাচ্ছি আর কেউ বলছে আমার রাতে ঘুমাতে ভয় করছে। আর পরের দিন গোলাপি রাজকুমারী তার সোনালি পাখিকে ডাক দিয়ে তার দুঃখের কথা বললো আর তার কাছ থেকে সমাধান চাইলো।
গোলাপি রাজকুমারী কাদতে কাদতে তার পাখিকে বলল, বলো আমি কিভাবে আমার রাজ্যের প্রজাদের কে সুন্দর স্বপ্ন দেখে ঘুম পারাতে পারি। তখন সোনালি পাখি বলল, গোলাপ পানিতে কালো চুল। একথা শুনে গোলাপি রানী বলল, এই গোলাপ পানিতে কাজ হবে। সোনালি পাখি এ কথা বলে চলে গেল, কিন্তু গোলাপি রাজকুমারী সোনালি পাখির কথা চিন্তা করলো। গোলাপি রাজকুমারী সোনালি পাখির কথা অমান্য করলো না। পরে গোলাপি রাজকুমারী একটা বড় পানির পাত্রে পানি দিয়ে তার মধ্যে গোলাপের কিছু পাপড়ি দিয়ে তার চুল ঐ পানিতে ডুবালো।
আর সাথে সাথে তার চুল আগের মত লাল হয়ে গেল। গোলাপি রাজকুমারী আনন্দে আত্বহারা হয়ে গেল আর তার সোনালি পাখিকে ধন্যবাদ দিল। সন্ধ্যা বেলা তার সোনালি পাখি তার হাতে এসে বসলো।আর সেদিন রাতের আকাশ তার চুলের মত লাল হয়ে গেল। আর তখন গোলাপি রাজকুমারী ঘুম পারানি গান গাইল। রাজ্যের সব মানুষ ঘুমিয়ে পরলো। আর সুন্দর স্বপ্ন দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেল। দুষ্ট ডাইনি তা বুঝতে পারল। তার অভিশাপে কাজ হয়নি বলে ডাইনি রেগে আবার ,অভিশাপ দিল।
আর বলল, দেখ এবার আমার ক্ষমতা। দুষ্ট ডাইনির অভিশাপে গোলাপি রাজকুমারীর চুলের রং আবার কালো হয়ে গেল। গোলাপি রাজকুমারী দেখে তার সোনালি পাখিকে বলল, এসব কি হচ্ছে আমার সাথে। তারপর দুষ্ট ডাইনি তার যাদুর দ্বারা রাজ্যের সব গোলাপ ফুল নষ্ট করে দিল। আর গোলাপি রাজকুমারীকে কাদতে দেখে ডাইনি খুব খুশি হয়ে গেল। ডাইনি বলল, দেখি এবার আমার অভিশাপ থেকে তোমাকে কে বাচায়।
আবার দুঃখি গোলাপি রাজকুমারী তার সোনালি পাখি কে বলল, বলো আমার সোনালি পাখি আমি কিভাবে আমার রাজ্যের মানুষদের ঘুম পারানি গান শুনাতে পারবো। গোলাপি রাজকুমারীর কথা শুনে সোনালি পাখি আগের মত বললো। গোলাপ পানিতে কালো চুল। একথা শুনে গোলাপি রাজকুমারী সোনালি পাখিকে বলল, আমাদের রাজ্যে তো কোন গোলাপ ফুল নেই। সোনালি পাখি বলল, কালো চুল গোলাপ পানিতে। সে একথা বলে উড়ে চলে গেল।
তখন গোলাপি রাজকুমারী তার সোনালি পাখিকে বলল, তুমি আমাকে অন্য আরেকটা উপায় বলে দাও। গোলাপি রাজকুমারী বুঝতে পারলো না সে এখন কি করবে। একথা ভাবতে ভাবতে তার দুচোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। আর যখন তার চোখের এক ফোটা পানি মাটিতে পরলো। ঠিক তখনি একজন সুন্দর রাজকুমার তার বারান্দায় এসে দারালো। আর তখন রাজকুমার ছোট একটা বাস্কো থেকে লাল চুল বের করে গোলাপি রাজকুমারীর চোখের পানিতে রাখলো। ঠিক তখন এক অলৌকিক ঘটনা ঘটলো।
সেই লাল চুল একটা লাল গোলাপে পরিনত হলো। রাজকুমার ফুলটা হাতে নিল আর বলল এটাতে কাজ হওয়া উচিত। এবার রাজকুমার গোলাপ টি হাতে নিয়ে রাজকুমারীর কাছে গেল। রাজকুমার বলল, এটা তোমার জন্য সুন্দরী রাজকুমারী। গোলাপি রাজকুমারী লাল গোলাপ দেখে খুশি হয়ে গেল। আর বলল এটা তুমি কোথায় পেলে। রাজকুমার বলল, এটা আমি তোমার জন্য বানিয়েছি। তোমার চোখের এক ফোটা পানি দিয়ে এই লাল গোলাপ তৈরী করেছি। গোলাপি রাজকুমারী খুশি হয়ে রাজকুমারের কাছ থেকে গোলাপ ফুলটি নিল।
আর গোলাপের পাতা গুলো ছিরে পানিতে দিয়ে তার চুল ভেজালো। আর সাথে সাথে দুষ্ট ডাইনির অভিশাপ নষ্ট হয়ে গেল। আবার গোলাপি রাজকুমারীর চুল লাল হয়ে গেল। তার লাল চুল দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। তখন রাজা রাজকুমার কে বলল, তুমি এই লাল চুল কোথায় পেলে। রাজকুমার বলল, যখন আমি আর রাজকুমারী ছোট ছিলাম। তখন তার একটা চুল ছিরে আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম। আমাদের ভালবাসার চিহ্ন হিসাবে। আর ও আমার একটা চুল রেখেছিল নিজের কাছে।
তখন গোলাপি রাজকুমারী একটা বাস্কো বের করলো। আর সেই বাস্কের মধ্যে ছিল রাজকুমারের কালো চুল। সবাই তাদের এই ব্যপারে অনেক খুশি হয়ে সে দিনেই গোলাপি রাজকুমারীর সাথে রাজকুমারের ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দিল। আর এদিকে দুষ্ট ডাইনি তা জানতে পারলো তার অভিশাপ নষ্ট হয়ে গেছে।
দুষ্ট ডাইনি এতটাই রেগে গেল যে, তার সারা শরীর ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। আবার রাজ্যের সব গোলাপ গাছে গোলাপ ফুল ফুটলো। আর প্রতিদিন সন্ধাবেলা গোলাপি রাজকুমারী তার সোনালি পাখি কে নিয়ে গান গাইতে আরাম্ভ করলো। যাতে তার রাজ্যের মানুষ ঘুমের মাঝে সুন্দর স্বপ্ন দেখে। আর সুন্দর স্বপ্ন দেখতে দেখতে যেন সকাল হয়ে যায়। আর এটাই ছিল প্রজাদের প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা।