কোম্পানির মালিক আর কর্মচারী বন্ধুর গল্প

0
63
কোম্পানির মালিক আর কর্মচারী বন্ধুর গল্প
কোম্পানির মালিক আর কর্মচারী বন্ধুর গল্প

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি মহান আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন। আজকে আমি আপনাদের একটি শিক্ষনীয় গল্প বলবো। হয়তো এই শিক্ষনীয় গল্প থেকে শীক্ষা নিয়ে আপনিও সফল হবেন। আজকের গল্পের নাম কোম্পানির মালিক আর কর্মচারী বন্ধু। চলুন কথা না বাড়িয়ে কোম্পানির মালিক আর কর্মচারী বন্ধুর গল্প শুরু করা যাক।

কোম্পানির মালিক আর কর্মচারী বন্ধুর গল্প

কেউ একজন খুব দামি একটা কথা বলেছিল,যে আপনার সময় যদি খারাপ যায় এবং আপনি যদি আপনার খারাপ সময় বদলাতে চান তাহলে আপনার সময়কে আর একটুখানি সময় দিন।

একসময় দুই জন ছাত্র আলাদা আলাদা গ্রাম থেকে একই শহরে আসে। দুজন দুজনের পরিচিত হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরী হয়ে যায়। তাদের আলাদা থাকার কথা থাকলেও তারা ঠিক করলো যে তারা একটা রুম নিয়ে দুই জন একসাথে থাকবে।

যেই কথা সেই কাজ, তারা আলাদা একটা রুম নিয়ে এক সাথে থাকা শুরু করলো। তারা দুই জন এ সরকারী চাকরির জন্য পড়াশুনা করছিল। আর বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলো। তারা দুই জন এ একই কোচিং সেন্টার এ ভর্তি হলো।

টাকার অভাবে তারা পায়ে হেটে কোচিং এ যেত। খুব খারাপ সময় পার করছিলো তারা দুই জনে মিলে। এত পরিশ্রম করেও কিছুই যেন হচ্ছিলো না। দু জনের ই মনে হচ্ছিলো যে, তারা মনে হয় জীবনে কিছু করতে পারবে না। তার পরেও তারা জীবন বাজি রেখে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে লাগলো। তারা এই আশায় ছিল যে কোন একদিন আসলে ভাল চাকরী অথবা কিছু একটা হবে। তাদের এই খারাপ সময়ের অবসান হবে।

এর মধ্যে দুই জন ই চাকরির পরিক্ষা দিয়েছিল। যখন রেজাল্ট আসলো দেখলো দুই জন এর ই চাকরী হয়ে গেছে। তারাও খুব খুশি চাকরি পেয়ে। অবশেষে তারা এত খাটুনির পর একটা করে চাকরি যোগার করতে পেরেছে। তাদের চাকরির জন্য দুই জন কেই আলাদা আলাদা জেলায় যেতে হলো। আলাদা জেলায় গেলেও তাদের মধ্যে খুশি ছিল কেননা তাদের কষ্টের দিন গুলো বদলে যেতে লাগলো।

চাকুরী করার কিছুদিন পর

ঠিক তার ১৫ বছর পর, খুবই কাকতালীও ভাবে আলাদা জায়গায় থেকেও তাদের দুই জনের এ মনে হচ্ছিলো যে, এই চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের মত করে আলাদা করে কিছু একটা করলে ভালো হবে। দুই জন এ আলাদা জায়গায় ভাবতেছিল যে, আসলে কি করা যায় নিজের মত করে।

এক বন্ধু ভাবতে ভাবতে ছোট্ট একটা স্টার্ট আপ শুরু করলো। ধীরে ধীরে তার কোম্পানি দাড়িয়ে যেতে লাগল এবং গ্রো হতে থাকলো। আর দ্বিতীয় বন্ধু ভাবতে লাগলো সে কোন একতা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করবে এবং ভালো একটা কর্পোরেট লাইফ মেইনটেইন করবে।

তাই সে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে লাগলো। কোথাও তার সিলেক্টশন হচ্ছিলো না। ঘরে বসে এমনিতে খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে লক্ষ্য করে যে, এক বিজ্ঞাপনে তার ওই সেই বন্ধুর ছবি ছাপা আর তার পাশে লেখা ম্যানেজিং ডিরেক্টর, সাথে তার কোম্পানীর নামও লেখা আছে।

এটা দেখে সে খুব খুশি হলো আর ভাবলো যাক এবার একটা চাকরি পাওয়া যাবে। এরপর যখন সে তার বন্ধুর কোম্পানিতে গেলো তখন সেখানকার গার্ড তাকে বললো যে, স্যার তো খুব ব্যস্ত থাকেন তার সাথে হয়ত দেখা করতে পারবেন না। এই কথা বলতে বলতে হঠাৎ সেই বন্ধু অফিস থেকে বাহির হচ্ছিলো কোথাও যাওয়ার জন্য।

বাহিরে বের হতেই দুইজনের দেখা হয়ে গেলো। ম্যানেজিং ডিরেক্টর বন্ধু তার বন্ধুকে দেখে ঠিকি চিনতে পারলেন এবং বললো, আরে ভাই কি অবস্থা তোর? কেমন আছিস? কত দিন পর দেখা! সে বলল এই তো ঠিক ঠাক আছিরে, আমি আগের চাকরি টা ছেড়ে দিয়েছি। আর খবরের কাগজে তোর খোঁজ পেলাম। বেশ তো ভালই বড় কোম্পানি দার করিয়েছিস।

আচ্ছা আমি কি তোর কোম্পানিতে একটা চাকরি পেতে পারি? বন্ধুটি বল্লো অবশ্যই, এক বন্ধু আরেক বন্ধুর কোম্পানিতে চাকরি করবে এতে আবার সমস্যা কি? তুই তোর ইচ্ছা মত কোন একটা পোস্ট এ যোগদান করতে পারিস। এর পর বন্ধুটি জয়েন করে। বেশ ভালই চলছিল দিনকাল। দুই জনে এর পর আগের মত করে আবার আড্ডা দিতে লাগলো।

দুই বন্ধুর আড্ডা

বন্ধুত্ব আগের থেকেও গভীর হতে লাগলো। একদিন এক সন্ধ্যায় দুই জন এ আড্ডা দিতে লাগলো, চাকরি নেওয়া বন্ধুটি কোম্পানিওয়ালা বন্ধুকে বলেই বসলো যে, আচ্ছা ভাই বল তো, তুই আমি এক সাথেই পড়তাম, তোর আর আমার মেধা ও প্রায় একই, দুই জন এ পরিক্ষায় পাস করে চাকরি ও পেয়েছিলাম। আজ তুই কম্পানির মালিক আর আমি তোর কোম্পানিতে চাকরি করছি। কেন এমন টা হলো? এর ব্যাখ্যা দিতে পারবি কি তুই? কোম্পানীর মালিক বন্ধুটি বললো যে হ্যা।

বন্ধুটি বললো আচ্ছা তোর মনে আছে? একবার তুই আর আমি হেটে হেটে কোচিং এ যাচ্ছিলাম। অর্ধেক রাস্তায় এসে মনে পড়ে যে রুম এর ফ্যান ওফ না করেই আমরা আসছিলাম। বন্ধুটি বলে হ্যা-হ্যা মনে আছে তো। আবার মালিক বন্ধুটি বললো, আমি তোকে বলে ছিলাম যে, চল রুমে গিয়ে ফ্যান অফ করে তার পর দুই জন এ আবার হেটে হেটে কোচিং এ আসবো।

আর তুই বলেছিলি আরে পাগল নাকি? ফ্যান চলছে চলুক না, বিল যা আসার তা তো বাড়ি ওয়ালার আসবে। তাতে আমাদের কি? কিন্তু সেদিন আমি ঐখান থেকে রুম এ গিয়ে ফ্যান অফ করে তার পর পায়ে হেটে কোচিং এ গেছিলাম আর তুই সোজাই কোচিং এ গেছিলি। ওই  দিন ও তুই চাকরের মত চিন্তা করেছিলি আর আমি মালিকের মত চিন্তা করে ছিলাম। আমাদের পার্থক্য শুধু এই চিন্তা চেতনায়।

কেউ একজন ঠিকি বলে ছিলেন, যদি মালিক হতে চাও তাহলে মালিকের মত চিন্তা ভাবনা করতে আগে শিখো।

তো বন্ধুরা আজকের শিক্ষনীয় গল্প থেকে কি শিখলেন? আসলে আমরা কোন কিছুর মালিক হতে চাইলে প্রথমে আমাদের চিন্তা ধারা মালিকের মত করতে হবে। আজকে থেকেই আমরা আমাদের চিন্তা ধারা মালিকের মত করবো এবং সেই সাথে আমাদের লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হব। দেখবো একদিন সাফল্য আমাদের হাতে ধরা দিবে।