আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি মহান আল্লাহ তাআলার রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমিও ( আলহামদুলিল্লাহ ) ভালো আছি। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজ আমি আপানাদের কে এক রাজকুমারের গল্প বলবো। আশা করি মজার গল্প টি পরে সবার ভাল লাগবে। আর আমি আমার গল্পের নাম দিয়েছি, এক রাজ্যর গাধা রাজকুমারের গল্প –
এক রাজ্যর গাধা রাজকুমারের গল্প
অনেক দিন আগে এক রাজ্য এক সাহসী রাজা বাস করতো। তিনি ছিলেন অনেক ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু তিনি ছিলেন দয়াবান ও উদার মনের মানুষ। তার রানী ছিল সুন্দর ও দানশীল। কিন্তু তাদের প্রাসাদে কোন সন্তান ছিল না। তাদের সন্তান না থাকায় তারা সব সময় সন্তান চাইত। রাজ্যর প্রজারা রাজাকে অনেক অবাঞ্চিত কথা বলত। এতে রাজ্য প্রায় হতাসায় ডুবে গিয়েছিল।
অবশেষে অনেক প্রার্থনার পর রাজার ঘরে এক সন্তান আসলো। কিন্তু হায়রে কপাল রাজার ঘরে আসলো এক গাধা রাজকুমার। রাজা রানী কাদতে থাকলো আর কাদতে থাকলো। তারা কোন ভাবেই বুঝতে পারলো না যে, রাজার ঘরে কি ভাবে গাধা রাজকুমার জন্ম নিল। তাদের এমন অবস্থায় আকাশে হঠাৎ এক পরী উদয় হল। পরী এসে রাজা কে গাধা রাজকুমারের জন্মের গল্প টি খুলে বললেন। এই যে প্রিয় রাজা এগুলো সব আপনার কর্ম ফল।
আপনি যখন ছোট ছিলেন, তখন পশু শিকার করতে গিয়ে জংগলে। আপনি একটি নিরীহ গাধা কে শিকার করে ছিলেন। আর সে কারনে আজ আপনার ছেলে গাধা হয়ে জন্ম নিয়েছে। তখন রাজা বলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি ভুল করেছি এর জন্য আমাকে শাস্তি দাও।
তবুও আমার ছেলেকে মানুষের রুপে পরিনত করে দাও। আমার ছেলে কে মাফ করে দাও। তখন পরী বলল, যে সময় আপনি এই অপরাধ করেছিলেন। সে সময় এই অভিশাপ আপনাকে আকড়ে ধরেছিল। আপনি এই অভিশাপ থেকে কখনো রেহাই পাবেন না।
পরী বলল, আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। রাজা বলল আমাকে কি করতে হবে। পরী বলল, এই গাধা প্রত্যক রাতে গায়ের চামড়ার পরিবতন হয়ে সত্যিকারের রাজকুমার হবে। আর সকাল হলে আবার গাধায় পরিনত হবে। রাজা বলল, দেখ পরী তুমি এমন কিছু করে দাও যে, সে দিনের বেলা রাজকুমার হয়ে থাকবে আর রাত হলে গাধায় পরিনত হবে।
তখন পরী বলল আমি এই অভিশাপ কখনো পরিবতন করতে পারবো না। আমাকে মাফ করবেন রাজা মশাই। তবে আপনি চিন্তা করবেন না আপনার রাজকুমার একদিন মানুষের রুপে পরিনত হবে। কিন্তু সাবধান এই অভিশাপের কথা যেন কেউ না যানে।
রাজা এবং রানী
যদি কেউ জানতে পারে তাহলে আপনার রাজকুমার আর কোনদিন মানুষ হতে পারবে না সারা জীবন গাধা হয়ে থাকবে। তবে রাজা আপনি বিশ্বাস রাখতে পারেন একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। এই বলে পরী চলে যায় আর রাজার দুচোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। তখন রানী রাজা বলে, আমি আপনার কস্ট টা বুঝতে পারছি।
ও যেমনি হোক ও আমার ছেলে আমাদের ছেলে। আমরা এই রাজ কুমার কে একদিন রাজ কুমার হিসাবে বড় করে তুলবো। রানীর এ কথা শুনে রাজার কস্ট টা হালকা হয়ে যায় এবং রাজা এই গাধা রাজকুমার কে কোলে তুলে নেয়। আর রাজা গাধা রাজকুমারের নাম রাখেন পিও।
তারপর দিন দিন পিও অন্য গাধা গুলোর থেকে অনেক তাজা এবং দেখতে সুন্দর হয়ে উঠলো। সে সারাদিন লাফালাফি করে ঘুরে বেরাত। আর রাতের বেলা তার চামড়া খুলে আয়নার সামনে বসে তার নিজের চেহেরার দিকে দেখত আর দুচোখের পানি ফেলতো। আয়নার সামনে বসে রাজ কুমার তার ভাগ্যে কে দোসারপ করতো।
বলতো আমি যদি আমার এই অভিশাপের কথা কাউকে বলতে পারতাম। কিন্তু রাজকুমার জানে একজন গাধার থেকে অভিশপ্ত মানুষ কত খারাপ। আর সবাই আমার কাছ থেকে পালাবে। কেউ আমাকে আর কাছে নেবে না। এভাবেই তার দিন গুলো কাটালো।
হঠাৎ একদিন চলার সময় একজন গিটার ম্যানের সাথে দেখা হয়। এই গাধা রাজকুমার তার কাছে যায় গিটার বাজানো শেখার জন্য। তখন গিটার ম্যান বলে, এটা আপনার জন্য না। আর এই দুনিয়ায় এমন কোন মানুষ নেই যে আপনাকে এটা বাজানো শেখাতে পারে। আমাকে মাফ করবেন আমি পারব না।
আপনার খুর বা নখ অনেক বড় । আপনি বাজাতে পারবেন না। তখন গাধা রাজকুমার দৌড়ে গিয়ে গিটার নিল আর বাজাতে শুরু করলো। আর সেদিন থেকেই, তিনি নিজেই তার ভাগ্যের পরিবতন আনলো। গাধা রাজকুমার দিন রাত তার গিটার বাজানো শুরু করলো। যতখন না তিনি গিটার বাজানোতে পারদশী না হন।
গাধা রাজকুমারের পৃথিবী ভ্রমন
এতে দিনদিন রাজকুমারের গিটার বাজানো রাজ্য অনেক সাড়া জাগালো। সে মানুষের মন জোগাল। তার গিটারের সুরে রাজ্যের প্রজারা তাকে বাহবা দিল। কিন্তু তাতে তার ব্যথিত মন ভরলো না। একদিন সে ঠিক করল সারা পৃথিবী ঘুরে দেখবে। তাই সে তার গিটার নিয়ে অনেক দূরে চলে গেল। হাটতে হাটতে সে অন্য রাজ্যের দেশে চলে গেল।
সেখানে গিয়ে সে একটা বড় লোহার গেট দেখতে পেল। তখন গাধা রাজকুমার গেটের দারয়ান কে বলল,এই যে বিনয়ী দারয়ান আমি অনেক দূরের রাজ্যের রাজকুমার দয়া করে দরজাটা খুলে দিবেন। তখন বিনয়ী দারয়ান গাধা রাজকুমার কে বলল, আপনার রাজ্যে কি কোন বড় আয়না নেই যে আপনি আপনার চেহেরাটা দেখতে পাননি। তুমি কোনো রাজকুমার হতে পার না। তুমি তো কেবল একটা গাধা।
তখন গাধা রাজকুমার দারয়ান কে বলল, ঠিক আছে ভাই। এই কথা বলে গাধা রাজকুমার তার খুর দিয়ে গিটার বাজানো শুরু করলো। গিটারের শুরে মুগ্ধ হয়ে দারয়ান রাজার কাছে চলে গেল। রাজা দারয়ানের কথা শুনে এক রাজ্যর গাধা রাজকুমার কে আসতে বললো। প্রাসাদে ঢুকে রাজা মশাই, গাধা রাজকুমার কে সংব্বধনা জানালো।
আর বলল নিশ্চই তুমি অনেক ক্ষুদার্থ, এখানে বসো। গাধা রাজকুমার বলল, আমি মেঝেতে বসবো না। এই কথা শুনে অন্য সবাই অবাক হয়ে গেল। তখন সবাই বলল, তাহলে আপনি আমাদের সাথে চেয়ারে বসে খেতে পারেন। গাধা রাজকুমার বলল আমি কোন সাধারন গাধা নই। আমি রাজ গাধা। আমি রাজার সাথে বসে খাব।
এ কথা শুনে রাজা সবাই কে বলল, ও কোন সাধারন গাধা নয় ও হচ্ছে একজন রাজ গাধা। সে আমার সাথে বসে খাবে। তখন গাধা রাজকুমার রাজার কাছে গেল ঠিক সেই সময় রাজার মেয়ে চলে আসলো। রাজা গাধা রাজকুমার কে বলল,তুমি চাইলে আমার মেয়ের সাথে বসতে পার।
গাধা রাজকুমার বলল, রাজা মশাই আজ পর্যন্ত আমি আপনার মেয়ের মত সুন্দরী আর কাউকে দেখি নাই। তার সাথে বসতে আমার খুব ভাল লাগবে। তখন গাধা রাজকুমার রাজা এবং তার মেয়ের পাশে বসলো।
রাজকুমারী ও গাধা রাজকুমারের প্রেমের গল্প
পাশে বসতেই রাজ কুমারী প্রথমে ঘৃণা করলেও তার আচরনে মুগ্ধ হল। রাজ কুমারী ভাবলো সে গাধা হলেও সব সময় পরিষ্কার। গাধা রাজকুমার ছিল অনেক বিচক্ষন ও বুদ্ধিমান। যারা প্রথমে গাধা রাজকুমার কে অবহেলা করেছিল তারাও তাকে সংব্বধনা জানালো। পরে রাজা মশাই গাধা রাজকুমার কে তার কাছে থাকার জন্য বলল, গাধা রাজকুমার খুব সহজেই রাজি হয়ে গেল। কারন সে রাজ কুমারীর প্রেমে পরে ছিল।
এভাবে তার দিন কাটতে লাগলো। গাধা রাজকুমার নানা ধরনের খেলা ও গিটারের শুরে রাজ কুমারীর মন জয় করে নিয়েছিল। কিন্তু গাধা রাজকুমারের এটা যথেষ্ট ছিল না। হঠাৎ একদিন গাধা রাজকুমার রাজকুমারীর ঘরে ঢুকে পরলো। সেখানে গিয়ে গাধা রাজকুমার তার মনের কথা রাজ কুমারীকে বলতে চাইলো।
কিন্তু গাধা রাজকুমার বলতে সাহস পেল না। গাধা রাজকুমার এতটাই বুদ্ধিমান ছিল। সে পরের দিন রাজা কে বলল, আমি চলে যাব। রাজা বলল, কিন্তু কেন আমি তোমার জন্য হীরে, জহরত, সোনা, কাপড় তোমার খাবার সব রেখেছি। তুমি সবগুলো নাকচ করে চলে যাচ্ছো কেন। তুমি আমাকে বলো।
তখন গাধা রাজকুমার রাজা কে বলল, আপনার মেয়ে। রাজা তখন অবাক হয়ে গেল। এত বড় সাহস তুমি আমার মেয়ে কে চাও।কিন্তু রাজা একটুকু ভাবলেন না। কেননা রাজা তার ছেলে কে অনেক আগেই প্রসাধ থেকে বের করে দিয়েছেন।
তাই এখন তিনি ক্লান্ত হয়ে পরেছেন। তাই এই সুযোগ তিনি হারাতে চান না। আর গাধাকে তিনি খুব পছন্দ করতেন। আর ছেলে কে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি গাধা রাজকুমারের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।
রাজা গাধা রাজকুমারের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হলেন। গাধা রাজকুমার রাজার কথা শুনে নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিল না। রাজা তখন ছোট অনুষ্ঠান করে ঘরোয়া পরিবেশে রাজ কুমারীর সাথে গাধা রাজকুমারের বিবাহ সম্পন্ন করেন।
বাসর ঘরে রাজ কন্যার চোখে পানি দেখে গাধা রাজকুমার বললো,ও রাজ কন্যা তুমি কেদো না তোমার চোখে পানি দেখলে আমার বুকটা ফেটে যায়। তুমি কেদো না। দয়াকরে তুমি কেদো না।
চাঁদের আলোয় গাধা রাজকুমার
তুমি যদি আমাকে একটু সময় দাও তাহলে বুঝতে পারবে আমি কে। কিছুখন পর গাধার গায়ে চাঁদের আলো পরল। চাঁদের আলো পরতেই গাধা রাজকুমারের গায়ের চামড়া পরে গেল। আর তার আসল চেহেরা বের হয়ে আসলো। আর রাজ কুমারী তাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। তখন গাধা রাজকুমার তার অভিশাপের কথা রাজ কুমারী কে বলল।
রাজ কুমারী তখন দৌরে গিয়ে রাজকুমার কে জরিয়ে ধরলো। তাকে দেখে রাজ কন্যা গাধার কথা ভুলেই গেল। রাজ কন্যা রাজ কুমার পিও কে পেয়ে অনেক খুশি হয়ে গেল। আর বলল, আমি তোমাকে আমার সপ্নে পেয়েছিলাম তা আজ কে আমার সত্য হলো। এরপর রাজ কন্যা তার গাধা রাজকুমার কে আগের থেকে অনেক যত্ন নেয়া শুরু করলো। তা দেখে রাজা অবাক হয়ে গেল।
একদিন রাতে হঠাৎ এক চাকর রাজ কন্যার ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কি দেখেছে তা রাজা মশাই কে বললো। কিন্তু রাজা তার কথা বিশ্বাস করলো না। তিনি নিজের চোখে দেখবেন। তিনি একদিন চাকরের কথামত আড়াল থেকে গাদা রাজকুমার কে দেখলেন। তিনি সুন্দর রাজ কুমার কে দেখে অনেক আনন্দিত হলেন। রাজকুমার কে দেখে রাজা তার কন্যার ঘর থেকে চলে আসলেন।
সেদিন রাতে রাজার ঘরে সেই পরী চলে আসলেন। পরী এসে এক রাজ্যর গাধা রাজকুমারের গল্প টি রাজাকে বললেন। আপনি চিন্তা করবেন না, রাজকুমার এবার তার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। রাজা বললেন আমার কি করতে হবে। পরী বলল আপনি শুধু এই বোতলের পানি গাধার চামড়ার উপর ছিটিয়ে দিন আর সাথে সাথে গাধার চামড়া হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
তাহলে আমাদের রাজকুমার সারা জীবনের মত এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। আর মানুষের রুপে বেঁচে থাকবে। রাজা আর দেরি না করে তার কন্যার ঘরে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে রাজা সেই বোতলের পানি গাধার চামড়ার উপর ছিটিয়ে দিলেন আর মহূতের মধ্যে চামড়া হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
সুদর্শন রাজকুমারে পরিনত
পরের দিন সকাল বেলা রাজ কুমার তার গাধার চামড়ার কথা বলল। তখন রাজা বলল, সেই চামড়া সারা জীবনের মত চলে গেছে। রাজ কুমার বলল, এটা আপনি কি করেছন এখন সবাই আমার অভিশাপের কথা জানবে। তখন রাজা বললেন, তুমি তোমার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সবার যেমন মন জয় করে নিয়েছিলে। তেমনি তুমি এখন একজন সু-দশন রাজ কুমার।
মানুষ এখন তোমার এই অভিশাপের কথা জানতে পারে কিন্তু তা কিছুদিনের মধ্যে ভুলে যাবে। আর তুমি যদি ভাব মানুষেরা কি বলে তাহলে তুমি কোন দিন সুখি হবে না। আর যখন তুমি গাধা ছিলে তখন তুমি অনেক সাহসি ও বুদ্ধিমান ছিলে। আর সেটাই তুমি আবার ফিরিয়ে আন। সেটাই এখন দরকার। তারপর কি হলো,
পরের দিন দুই পরিবার মিলে ধুমধাম করে আবার বিবাহ হলো। তারপর রাজ কুমার পিও তার রানীকে নিয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে গেল। সেখানে গিয়ে তার রাজ্যে অভিষেক হলো। আর তিনি এক মহান রাজায় পরিনত হলেন। তিনি বহু বছর ধরে রাজ্যে শাসন করেছিলেন। তাকে আর কেউ কোনদিন গাধা রাজকুমার বলেনি। তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করলো।
বন্ধুরা, গাধা রাজকুমারের গল্প টি আপমাদের কাছে ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ